বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবী চীন করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিচ্ছেনা কারন চীনের সাথে স্পষ্ট যোগাযোগ নিশ্চিত করতে পারছেনা তারা।

ডা. টেডরস আধানম গেব্রেয়াসাস বলেন, ভাইরাসটিকে ঠেকানোর মতো সুযোগ সীমিত বা ‘সংকীর্ণ’ হয়ে আসছে।

শনিবার চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যু এবং নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে।

কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান এবং অন্য দেশে এই সংখ্যা বাড়ছে।

চীনের বাইরে, ২৬টি দেশে কমপক্ষে ১২০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং আট জন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই জন মারা গেছেন। চীনের বাইরে এবং জাপানে কোয়ারেন্টিন করে রাখা একটি প্রমোদতরীর বাইরে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রয়েছে দেশটিতে।

শনিবার, দক্ষিণ কোরিয়া জানায় সেখানে নতুন করে ১৪২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৪৬ জনে।

৩২ জন ব্রিটিশ এবং ইউরোপীয় যাত্রী নিয়ে একটি ফ্লাইট জাপান থেকে রওয়ানা করেছে এবং এটি শনিবার ইংল্যান্ডে অবতরণের কথা রয়েছে।

শুক্রবার, এএনএসএ সংবাদ সংস্থা বলছে, ইতালির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৮ বছর বয়সী এক জন দেশটিতে মারা গেছে।

এর আগে ইতালি ঘোষণা করেছিল যে, দেশটিতে নতুন করে ১৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত এলাকায় স্কুল এবং অফিস বন্ধ থাকবে এবং খেলাধুলার সব কর্মকাণ্ডও বাতিল করা হয়েছে।

চীনে এপর্যন্ত ৭৬,২৮৮ জন আক্রান্ত এবং ২,৩৪৫ জন মারা গেছে। যা গত বছর চীনের হুবেই প্রদেশে আবিষ্কৃত নতুন এই ভাইরাসটি কোভিড-১৯ নামে শ্বাসযন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান যা বলেছেন:

ডা. টেডরস বলেন, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা “তুলনামূলকভাবে কম” কিন্তু সংক্রমণের ধরণ উদ্বেগজনক।

“যে সব সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের সাথে কোন যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ প্রাদুর্ভাবের শিকার এলাকায় ভ্রমণ করার কোন উল্লেখ নেই অথবা আগে কোন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসারও কোন উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না সেসব সংক্রমণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে,” তিনি বলেন।

ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা “খুবই উদ্বেগজনক”, তিনি বলেন।
কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন যে চীন এবং অন্য দেশগুলো ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যে ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে এর সাথে “মোকাবেলা করার সুযোগ” তৈরি হয়েছে।

এবং নতুন করে যাতে প্রাদুর্ভাব শুরু না হয় তা ঠেকাতে দেশগুলোকে আরো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি:

শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়ানোর পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সাই-কিউন দেশটিতে গণস্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

দক্ষিণাঞ্চলের দায়েগু এবং চেংডু শহর দুটিকে “বিশেষ পর্যবেক্ষণ এলাকা” ঘোষণা করা হয়েছে। দায়েগু শহরের রাস্তা এখন পুরো ফাঁকা।

দেশটির রাজধানী সিউলের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুসানে দুই জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং জেজু আইল্যান্ডে আরো একজন আক্রান্ত হয়েছে- দুই স্থানেই আক্রান্তের ঘটনা এই প্রথম।

তিন সেনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পর সব সামরিক ঘাঁটি অচল বা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য ‘হটবেড’ বা বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে সনাক্তের পর একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ৯০০০ সদস্যকে নিজ উদ্যোগে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবের উৎপত্তি চেংডু শহরে যেখানে ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনেক সদস্য ৩১শে জানুয়ারি থেকে শুরু করে দোসরা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতার ভাইয়ের এক শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল।

শুক্রবার পর্যন্ত ওই চার্চের ৪০০শরও বেশি সদস্যের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তবে পরীক্ষা এখনো চলছে বলে জানানো হয়েছে।

ইরানের বর্তমান অবস্থা:

ইরানে বেশিরভাগ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে রাজধানী তেহরানের দক্ষিণে পবিত্র শহর কোমে। এটি শিয়া মুসলিমদের জন্য জনপ্রিয় এলাকা।

ইরান জানিয়েছে, কোম এলাকায় শুক্রবার আরো দুই জন মারা গেছে, যা বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া আরো দুই জনের সাথে যোগ হলো। দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ১৮ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

লেবাননে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে যা দেশটিতে প্রথম। ওই নারী কোম থেকে বৈরুতে পৌঁছেছেন বলে জানা যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল এবং মিশরেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে কানাডার কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে যে নয়জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে একজন সম্প্রতি ইরান থেকে ফিরেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইরান এবং লেবাননে করোনাভাইরাস সনাক্ত করার মতো মৌলিক সামর্থ্য রয়েছে এবং আরো সহায়তা দেয়ার জন্য সংস্থাটি দেশ দুটির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

কিন্তু ডা টেডরস বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কারণ ধারণা করা হচ্ছে যে, দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে যেসব দেশে সেসব দেশেই হয়তো ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।

চীন এবং অন্যান্য স্থানের অবস্থা:

ভাইরাস এখন দেশটির কারাগারেও ছড়িয়ে পড়েছে, ৫০০শরও বেশি বন্দী আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।

উহানে নারীদের একটি কারাগারে ২৩০ জন রোগী রয়েছেন। পূর্বাঞ্চলের শানডং এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঝেজিয়াং প্রদেশের কারাগারে আরো বন্দী আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বেইজিংয়ের একটি হাসপাতালেও ৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছে।

পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করতে না পারায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

১৪ দিনের বেশি কোয়ারেন্টিনে থাকার পর আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ না থাকায় ইয়োকোহামার একটি ক্রুজ জাহাজ থেকে যাত্রীদের নেমে অব্যাহত রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজে থাকা ১৮ জন আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানের পর পরীক্ষায় জানা গেছে যে তারা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর পর আরো প্রায় ৩০০ জন মার্কিন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন।

জাহাজটি থেকে দেড় শতাধিক অস্ট্রেলীয় নাগরিক এরইমধ্যে ডারউইনে পৌঁছেছেন, যেখানে তারা আরো দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডারউইনে পৌঁছানোর পর ছয় জন অসুস্থতা বোধ করায় তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই জনের সংক্রমণ রয়েছে। তবে এর আগে জাপান ছাড়ার আগে করা পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছিল যে, তাদের সংক্রমণ নেই।

হংকংয়ে প্রথম ব্যাচ ফিরেছে এবং সেখানেও তাদের একইভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে বলে জানানো হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here