নিউজ ডেস্ক:
শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংকের শেয়ার ছাড়া হচ্ছে। এসব ব্যাংকের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার পর্যায়ক্রমে ছাড়া হবে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ধাপে ধাপে ব্যাংকগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া আগে থেকে বাজারে থাকা রূপালী ব্যাংকের শেয়ার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে শুধু রূপালী ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এ ব্যাংকের ১০ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে বাজারে।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিডিবিএলের শেয়ার আসছে আগস্টে। অগ্রণীর সেপ্টেম্বরে। আর সোনালী ও জনতার শেয়ার ছাড়া হচ্ছে অক্টোবরের মধ্যে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র বলেছে, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে চারটি ব্যাংকের শেয়ার ছাড়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে রূপালী ব্যাংকের বাড়তি শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে কোনো সময়সীমা বেঁধে না দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

সূত্র জানায়, এসব ব্যাংকের শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া করবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবি ও সংশ্নিষ্ট ব্যাংকগুলো। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিষয়টি তদারক করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সরকার এ বিষয়ে তার নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এখন সংশ্নিষ্ট অংশীজন তা কার্যকর করবে।

জানা যায়, শেয়ারবাজার তদারক করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর শেয়ার যথাসময়ে ছাড়ার বিষয়টি এ কমিটি নিয়মিত তদারক করবে।

তবে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা এ পদক্ষেপের সুফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। অনিয়ম ও খেলাপি ঋণে জর্জরিত এসব ব্যাংক লোকসানি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, লোকসানি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ছাড়তে পারে না। এসব ব্যাংক বাজারে এলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। তারা মনে করেন, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাজারে আনতে হবে। ভালো শেয়ারের জোগান বাড়লে শেয়ারবাজার শক্তিশালী হবে। অবশ্য দীর্ঘ এক দশক থেকে সরকারি লাভজনক কোম্পানিকে বাজারে আনার আলোচনা চলছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। তারাই সরকারকে টাকা দিচ্ছে। তাই এখন আর রিফাইন্যান্সিংয়ের (পুনঃঅর্থায়ন) দরকার পড়ছে না বলেও জনান তিনি। প্রত্যেক ব্যাংকই লাভজনক বলে জানান তিনি।

এর আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানার সাত কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত তিতাস ও পিজিসিবির আরও শেয়ার ছাড়া হবে এবং বাকি পাঁচটি নতুন করে আইপিওতে আসতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে আরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার। সরকার যে কোনো মূল্যে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে চায়।

আরও চারটি সরকারি ব্যাংককে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হলে বাজারে কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলতে পারব না। আমাদের কাজ হচ্ছে বাজারের সহায়ক জায়গাগুলোতে সাপোর্ট দেওয়া। বাজার উঠবে নাকি নামবে তা সরকারের হাতে নেই। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আনা হচ্ছে।

এসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, কিছু সমস্যা আছে। বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ কম। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম হলে কিছু সময় বাজারে অস্থিরতা বেশি থাকে। এটা খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। মন্ত্রী জানান, একটা জায়গা নিয়ে সবসময় আমরা চিন্তাগ্রস্ত, সেটি হচ্ছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির প্রতিবিম্ব, অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তির ওপর সবসময় অবস্থান করে পুঁজিবাজার। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজার কেন যেন অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থনীতির গতিশীলতার সঙ্গে পুঁজিবাজারকে মেলানো যাচ্ছে না। সে জন্য এই বাজারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মুস্তফা কামাল বলেন, সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে কোনো খারাপ সংকেত নেই। তবে একটি খাত (রপ্তানি) এখন নেগেটিভ আছে। একটি খাত দিয়ে তো সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনা করা যাবে না। সব খাত যে সমভাবে চলবে তাও নয়। সারাবিশ্বের অর্থনীতির বিবেচনায় আমাদের অবস্থা ভালো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here