মুমিনের সত্যিকারের তওবা

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর কাছে তওবা করো, প্রকৃত তওবা। আশা করা যায়, আল্লাহ তোমাদের দোষত্রুটিসমূহ দূর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করবেন যারা পাদদেশ দিয়ে ঝরনাসমূহ প্রবাহিত৷(সূরা আত-তাহরিম : ৮)

ব্যাখ্যা:
অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিনদের নসিহত করেছেন। কালামে হাকিমের যত স্থানে ঈমানদার ব্যক্তিদের আহবান করা হয়েছে, সকল স্থানে মুমিনদের নাজাত এবং সফলতা অর্জনের জন্য নানাধরনের পরামর্শ, নির্দেশ এবং কৌশল বলে দেয়া হয়েছে। এ আয়াত তার ব্যতিক্রম নয়।

আয়াতের প্রথম অংশ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর কাছে তওবা করো, প্রকৃত তওবা’- প্রকৃত বা খাঁটি তওবা কী? এর ব্যাখ্যায় ইবন কাসির র. বলেন,
أَيْ تَوْبَة صَادِقَة جَازِمَة تَمْحُو مَا قَبْلهَا مِنْ السَّيِّئَات وَتَلُمّ شَعَثَ التَّائِب وَتَجْمَعُهُ وَتَكُفُّهُ عَمَّا كَانَ يَتَعَاطَاهُ مِنْ الدَّنَاءَات
অর্থাৎ সত্য, একনিষ্ঠ ও খাঁটি তওবা যার ফলে তোমাদের পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং তওবাকারীর বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো ভাবনাগুলো একত্রিত করা হবে এবং মন্দ স্বভাবসমূহ দূর হয়ে যাবে।

আরবি ভাষায় ( نَصَحَ) শব্দের অর্থ নিষ্কলুষতা ও কল্যাণকামিতা। খাঁটি মধু যা মোম ও অন্যান্য আবর্জনা থেকে মুক্ত করা হয়েছে তাকে আরবিতে (عَسَلٌ ناصِحٌ) বলা হয়। ছেঁড়া কাপড় সেলাই করে দেয়া এবং ফাটা ফাটা কাপড় ঠিক করে দেয়া বুঝাতে আরবি (نَصَّاحَةُ الثَّوب) শব্দ ব্যবহার করা হয় । অতএব, তওবা শব্দের সাথে نَصُوح বিশেষণ যুক্ত করলে হয় তার আভিধানিক অর্থ হবে এমন তওবা যার মধ্যে প্রদর্শনী বা মুনাফিকির লেশমাত্র নেই।

সত্যিকারের তওবা:

হযরত আলী (রা) একবার এক বেদুঈনকে মুখ থেকে ঝটপট করে তওবা ও ইসতিগফারের শব্দ উচ্চারণ করতে দেখে বললেন, এতো মিথ্যাবাদীদের তওবা। সে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে সত্যিকার তওবা কী? তিনি বললেন, সত্যিকার তওবার সাথে ছয়টি বিষয় থাকতে হবে তা হচ্ছে:
(১) যা কিছু ঘটেছে তার জন্য লজ্জিত হও। (২) নিজের যে কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে গাফিলতি করছ তা সম্পাদন কর। (৩) যার হক নষ্ট করেছ তা ফিরিয়ে দাও। (৪) যাকে কষ্ট দিয়েছ তার কাছে মাফ চাও। (৫) প্রতিজ্ঞা করো ভবিষ্যতে এ গোনাহ আর করবে না এবং (৬) নফসকে এতদিন পর্যন্ত যেভাবে গোনাহর কাজে অভ্যস্ত করেছ ঠিক তেমনিভাবে আনুগত্যে নিয়োজিত কর। এতদিন পর্যন্ত নফসকে যেভাবে আল্লাহর অবাধ্যতার মজায় নিয়োজিত রেখেছিলে এখন তাকে তেমনি আল্লাহর আনুগত্যের তিক্ততা আস্বাদন করাও (কাশশাফ)।

হযরত হাসান রা. বলেন,

التَّوْبَة النَّصُوح أَنْ تُبْغِض الذَّنْب كَمَا أَحْبَبْته وَتَسْتَغْفِرَ مِنْهُ إِذَا ذَكَرْته فَأَمَّا إِذَا جَزَمَ بِالتَّوْبَةِ وَصَمَّمَ عَلَيْهَا فَإِنَّهَا تَجُبُّ مَا قَبْلهَا مِنْ الْخَطِيئَات

বিশুদ্ধ তওবা হলো এই যে, যেমন গুনাহর প্রতি ভালোবাসা ও আকর্ষণ ছিল ঐ রকমই তার প্রতি অন্তরে ঘৃণা জন্মে যাওয়া। যখন ঐ গুনাহর কথা স্মরণ হয়, তখন ক্ষমা প্রার্থনা করা। যখন কোন বান্দা তওবা করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করে নেয় এবং তওবার ওপর অটল থাকে, তখন মহান আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।

ইমাম গাজজালী র. তওবায়ে নাসুহার জন্য তিনটি উপাদানের কথা বলেছেন। ঐ তিন উপাদানের সমন্বয় হচ্ছে খাঁটি তওবা। উক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে-

১. তওবা সম্পর্কে ইলম’ বা জ্ঞান থাকা। তওবাকারী গুনাহ সম্পর্কে জানবে এবং তা যে মাফ হতে পারে বা মহান আল্লাহ মাফ করতে পারেন তাও তার জানা থাকতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন৷ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ (সূরা আল যুমার : ৫৩)

২. তওবার সময় ব্যক্তির মানসিক অবস্থাযা তার আবেগ অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত সে সম্পর্কে জানা থাকা।

ক. পাপ করার পর ব্যক্তির তীব্র দংশন, মানসিক আঘাত ও যাতনা তৈরি হবে। মনে হবে দুনিয়ায় তার সবকিছু থেকেও নেই। এ ধরনের কষ্ট, আঘাত ও মনোযাতনা তৈরি হবে। এর চিত্রায়ণে মহান আল্লাহ বলেন,

وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّىٰ إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَن لَّا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيم

আর যে তিনজনের ব্যাপার মুলতবি করে দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও তিনি মাফ করে দিয়ছেন পৃথিবী তার সমগ্র ব্যাপকতা সত্ত্বেও যখন তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেলো, তাদের নিজেদের প্রাণও তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ালো এবং তারা জেনে নিল যে, আল্লাহর হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিজের রহমতের আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই, তখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের দিকে ফিরলেন যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। অবশ্যি আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা আত তাওবা : ১১৮)

তাঁর অনুশোচনা এমন হবে সে নিজেই মহান আল্লাহর কাছে অনবরত মাফ চাইতে থাকবে। যেমন আদম আ. ও হাওয়া রা. গাছের ফল খেয়ে অনুশোচনা করেছিলেন।

খ. সুদৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ। অর্থাৎ তওবার প্রাক্কালে অত্যন্ত একনিষ্ঠ, দৃঢ় ও শক্তভাবে এমন ওয়াদা করা যাতে কোন অবস্থায় কোনোভাবেই আর ঐ পাপ করার সামান্যতম অনুভূতি আর তৈরি না হয়। তওবাকারী অনুশোচনা করবে এবং সংকল্পবদ্ধ হবে ভবিষ্যতে নতুন করে আর পাপাচার করবে না। এর পাশাপাশি সে তার এ সত্য তওবা কবুল হওয়া থেকে নিরাশ হবে না। এ ধরনের ব্যক্তির ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِن تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا

তোমাদের রব খুব ভালো করেই জানেন তোমাদের মনে কী আছে৷ যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগির নীতি অবলম্বন করার দিক ফিরে আসে। (সূরা বনি ইসরাইল : ২৫)

৩. বিশুদ্ধ তওবার কিছু বাস্তব পদক্ষেপ বা আমল করা অত্যাবশ্যক
ক. তাৎক্ষনিণ ঐ অন্যায় থেকে বিরত থাকা। কারণ ব্যক্তির মনে হতে পারে আচ্ছা যেহেতু অন্যায়টা শুরু করেই ফেলেছি তাহলে শেষ করি। এর পর তওবা করব। এতে কোনো ফায়দা হবে না। কারণ, সে তার নফস এর কাছে পরাজিত হয়েছে। তবে সে যদি তাৎক্ষণিক ঐ পাপা থেকে ফিরে আসতে পারে, তাহলে সে বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার মত সওয়াবের অধিকারী হবে। মহান আল্লাহ তার জন্য সেখান থেকে ফিরে আসার পথ প্রদর্শন করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন:

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

যারা আমার জন্য সংগ্রাম-সাধনা করবে তাদেরকে আমি আমার পথ দেখাবো। আর অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশালীদেরই সাথে আছেন৷ (সূরা আল আনকাবুত : ৬৯)

খ. ইসতিগফার করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আন্তরিকভাবে ঠিকমত ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারলে মহান আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। এ ওয়াদা আল-কুরআনের অনেক স্থানে বিদ্যমান। সূরা হুদের ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَاسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ وَدُودٌ

“দেখো, নিজেদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এবং তাঁর দিকে ফিরে এসো। অবশ্যি আমার রব করুণাশীল এবং নিজের সৃষ্টিকে ভালোবাসেন।”

গ. পরিবেশ এবং বন্ধুদের পরিবর্তন করা। অর্থাৎ যেসব বন্ধুর সাথে চলাফেরা করলে এবং যেসব পরিবেশে গেলে তওবাকারী আবারও অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে পারে, সেসব স্থান এবং ব্যক্তি পরিত্যাগ করা। কারণ বন্ধু দুই প্রকার। একজন হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে, আরেকজন জাহান্নামে নিয়ে যাবে। সেদিন বন্ধু বন্ধুর শত্রু হয়ে যাবে। তারা একে অন্যকে বলবে তুমিই আমাকে পথভ্রষ্ট করেছো। তবে সেদিন মুত্তাকি বন্ধু এ কাজ করবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ

যখন সে দিনটি আসবে তখন মুত্তাকিরা ছাড়া অবশিষ্ট সব বন্ধুই একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে। (সূরা যুখরুফ : ৬৭)

ঘ. মন্দ কাজের উল্টো কাজ করা। অর্থাৎ কোন মানুষ যখন অন্যায় এবং মন্দ কাজ করে তখন তা দেখে তার উল্টো কাজ করা। যেমন- ক) কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, তওবাকারী তাকে সম্মান ও মর্যাদা দান করবে। খ) কেউ মন্দ পত্রিকা পাঠ করে, সে কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য পাঠ করবে। গ) কোন ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, তওবাকারী তা রক্ষা করার চেষ্টা করবে ঘ) কেউ গান-বাজনা এবং মন্দ আড্ডায় অংশগ্রহণ করে, তওবাকারী কোন উপকারী ইলমের দারসে অংশগ্রহণ করতে পারে।

ঙ) একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য খালিস তওবা হতে হবে। কোন ভয়-ভীতি, অনিষ্ট এবং ক্ষতির আশঙ্কায় কোন অন্যায় থেকে বিরত থাকলে তা তওবা হিসেবে কবুল হবে না। যেমন কেউ পিতার অবাধ্য হলো এবং পিতা তার সন্তানকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করলো, তখন সে ব্যক্তি যদি অনুশোচনা করে তখন তা কবুল করা হবে না।

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে এবং সামগ্রিকভাবে তওবার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কিছু বিষয়ের অবগতি অত্যাবশ্যক। যেমন:

প্রথমত, প্রকৃতপক্ষে তওবা হচ্ছে কোন গোনাহের কারণে এ জন্য লজ্জিত হওয়া যে, তা আল্লাহর নাফরমানি। কোন গোনাহের কাজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বদনামের কারণ অথবা আর্থিক ক্ষতির কারণ হওয়ায় তা থেকে বিরত থাকার সঙ্কল্প করা তওবার সংজ্ঞায় পড়ে না।

দ্বিতীয়ত, যখনই কেউ বুঝতে পারবে যে, তার দ্বারা আল্লাহর নাফরমানি হয়েছে, তার উচিত তৎক্ষণাৎ তওবা করা এবং যেভাবেই হোক অবিলম্বে তার ক্ষতিপূরণ করা কর্তব্য, তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।

তৃতীয়ত, তওবা করে বারবার তা ভঙ্গ করা, তওবাকে খেলার বস্তু বানিয়ে নেয়া এবং যে গোনাহ থেকে তওবা করা হয়েছে বার বার তা করতে থাকা তওবা মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ। কেননা, তওবার প্রাণসত্তা হচ্ছে কৃত গোনাহ সম্পর্কে লজ্জিত হওয়া কিন্তু বার বার তওবা ভঙ্গ করা প্রমাণ করে যে, তার মধ্যে লজ্জার অনুভূতি নেই। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন:

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا﴾﴿وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

তবে এ কথা জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে তওবা কবুল হওয়ার অধিকার একমাত্র তারাই লাভ করে যারা অজ্ঞতার কারণে কোন খারপ কাজ করে বসে এবং তারপর অতি দ্রুত তওবা করে। এ ধরনের লোকদের প্রতি আল্লাহ আবার তাঁর অনুগ্রহের দৃষ্টি নিবন্ধ করেন এবং আল্লাহ সমস্ত বিষয়ের খবর রাখেন, তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। কিন্তু তওবা তাদের জন্য নয়, যারা খারাপ কাজ করে যেতেই থাকে, এমনকি তাদের কারো মৃত্যুর সময় এসে গেলে সে বলে, এখন আমি তওবা করলাম। অনুরূপভাবে তওবা তাদের জন্যও নয় যারা মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কাফের থাকে। এমন সব লোকদের জন্য তো আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরি করে রেখেছি। (সূরা আন নিসা : ১৭-১৮)

চতুর্থত, যে ব্যক্তি সরল মনে তওবা করে পুনরায় ঐ গোনাহ না করার সংকল্প করেছে মানবিক দুর্বলতার কারণে, যদি পুনরায় তার দ্বারা সেই গোনাহের পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে এ ক্ষেত্রে পূর্বের গোনাহ পুনরুজ্জীবিত হবে না, তবে পরবর্তী গোনাহের জন্য তার পুনরায় তওবা করা উচিত।

পঞ্চমত, যখনই গোনাহর কথা মনে পড়বে তখনই নতুন করে তওবা করা আবশ্যক নয়। কিন্তু তার প্রবৃত্তি যদি পূর্বের পাপময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে আনন্দ পায়, তাহলে গোনাহের স্মৃতিচারণ তাকে আনন্দ দেয়ার পরিবর্তে লজ্জাবোধ সৃষ্টির কারণ না হওয়া পর্যন্ত তার বার বার তওবা করা উচিত। কারণ, যে ব্যক্তি সত্যিই আল্লাহর ভয়ে গোনাহ থেকে তওবা করেছে, সে অতীতে আল্লাহর নাফরমানি করেছে এই চিন্তা করে কখনো আনন্দ অনুভব করতে পারে না। তা থেকে মজা পাওয়া ও আনন্দ অনুভব করা প্রমাণ করে যে, তার মনে আল্লাহর ভয় শিকড় গাড়তে পারেনি।

عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ

এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, তওবা করলে তোমাদের অবশ্যই মাফ করে দেয়া হবে। এবং তোমাদেরকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। বরং তাদের এই প্রত্যাশা দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা সরল মনে তওবা করো তাহলে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের সাথে এই আচরণ করবেন। এর অর্থ হলো, গোনাহগার বান্দার তওবা কবুল করা এবং তাকে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে জান্নাত দান করা আল্লাহর জন্য ওয়াজিব নয়। বরং তিনি যদি মাফ করে দেন এবং পুরস্কারও দেন তাহলে তা হবে সরাসরি তার দয়া ও মেহেরবানি। বান্দার তাঁর ক্ষমালাভের আশা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু তওবা করলে ক্ষমা পাওয়া যাবে এই ভরসায় গোনাহ করা উচিত নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here