বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৯) বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে মোট ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। আর পরিশোধ করা হয়েছে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই সময়ে মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা নিট ঋণ গ্রহণ করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সদস্য মমতা হেনা লাভলীর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।
এ সময় অধিবেশনে সভঅপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ৭২টি দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
তিনি জানান, বিএফআইইউ যে সব দেশের এফআইইউ এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে তাদের পাশাপাশি এগমন্ট গ্রুপের সদস্য এফআইইউগুলোর সঙ্গে নিয়মিতভাবে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএফআইইউ-এর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্ত বা বিদেশি এফআইইউ কর্তৃক স্বপ্রণোদিতভাবে পাঠানো তথ্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য নিয়মিতভাবে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থায় পাঠানো হয়ে থাকে।
বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেটে বৈদেশিক ঋণ/আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৪৪৭ মিলিয়ন ডলার সমতূল্য ৭১ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বৈদেশিক ঋণ/আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ২ হাজার ৭১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতূল্য ২৩ হাজার ২৩ কোটি টাকা।
গণফোরামের মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে শেয়ারবাজারে কিছু তারল্য সঙ্কট থাকলেও ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সঙ্কট নেই। বর্তমান বিরাজমান তারল্য সঙ্কট কাটিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গত জানুয়ারি তার কার্যালয়ে একটি সভা করেন। সরকার মনে করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য একটি গতিশীল ও শক্তিশালী পুঁজিবাজারের উপস্থিতি অপরিহার্য। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য যে ধরণের সাহায্য প্রয়োজন সরকার ধারাবাহিকভাবে তা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
মন্ত্রী জানান, ওই সভায় পুঁজিবাজারকে বিকশিত করা এবং বাজারে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কতিপয় স্বল্প-মেয়াদি কর্মসূচির বিষয়ে সভার আলোচনা করা হয়। স্বল্প মেয়াদি বেশ কিছু বিষয় অচিরেই কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তার ওপর মতামত প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার বিষয়টি পর্যালোচনা করা; ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো শনাক্ত করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বিগত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করা হলে ব্যাংকগুলো ওই খাতে ঋণ/বিনিয়োগ ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে অন্যান্য খাতে অধিক সুদহারে ঋণ/বিনিয়োগ দেয়ায় আগ্রহী হয়ে পড়তে পারে। ফলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যতিরেখে অন্যান্য সব খাতে ঋণ/বিনিয়োগের সুদহার শতকরা ৯ ভাগে নির্ধারণ করে আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে কার্যকর করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন।