অনেকেই বলছেন বয়স একশো পেরিয়েছে। কারো সহযোগিতা ছাড়া নড়াচড়াও করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে মুখ নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। বৃদ্ধা এই মহিলাকে স্টেশনে ফেলে পালিয়েছে ছেলে। রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে এমনই এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ১৫ দিন আগে শতবর্ষী এ মাকে কনকনে শীতের মধ্যে স্টেশনে ফেলে গেছে তার ছেলে ও ছেলের বউ। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে স্টেশনের পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মে পড়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানান, একটি ভ্যানে করে ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে এসে স্টেশনে ফেলে যান একজন নারী ও একজন পুরুষ। আমি তখন স্টেশনেই উপস্থিত ছিলাম। চলে যাওয়ার সময় তাদের ডেকেছিলাম। কিন্তু তারা সাড়া না দিয়ে চলে যায়। এর পরেই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধা। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মালতী নামে এক নারী ওই বৃদ্ধার সাথে হাসপাতালে আছেন। মালতী জানান, চিকিৎসা পেয়ে কিছুটা সাড়া দিচ্ছেন ওই বৃদ্ধা। ইশারা ও অস্পষ্ট ভাষায় কথা বলছেন। তার কথা এবং ইশারায় সন্তানদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ফুটে উঠছে। তিনি বলেন, আমি তাকে বলেছি- ‘খালা, তোমার ছেলে এসেছে। চোখ খোলো।’ তিনি তখন ইশারায় ছেলেকে চলে যেতে বলছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্লাটফর্মে খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন ওই মা। নিজেকে তার সন্তান মনেই করেই হাসপাতালে নিয়ে আসি। গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসপাতালে আনার পর ওই বৃদ্ধার রক্তচাপ ও পালস অস্বাভাবিক ছিলো। চিকিৎসা পেয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। অপুষ্টি ও অপরিচ্ছন্নতা থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
জানা গিয়েছে ওই বৃদ্ধার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন রহনপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আহম্মদ। তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। মাকে এভাবে ফেলে যাওয়ার মতো জঘন্য কাজ কোনো ছেলে করতে পারে জানা ছিল না। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছি। শতবর্ষী এ মায়ের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ আমি বহন করবো। তার সন্তানকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবো।