এম. জাফরান আদনান
আর সাধারণ জনগণের কাছ থেকে নেওয়া আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলো কাউকে ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেবে না।
সোমবার রাতে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজধানীর গুলশানে বিএবি কার্যালয়ে বৈঠকটি হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা কথা দিয়েছিলাম ১ জানুয়ারি থেকে নয়-ছয় সুদ হার বাস্তবায়ন করব। আজ পর্যন্ত আমরা সেই সার্কুলার দিতে পারিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে সব হবে। আমরা প্রথমে যেভাবে সার্কুলার করতে চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রী তা রেখেছেন। সঙ্গে কিছু সংশোধন করেছেন। সেই সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে কিছু সময় লাগবে।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মুস্তফা কামাল বলেন, “আগে জানতেন, ৯ শতাংশ সুদ শুধু উৎপাদন খাতে কার্যকর হবে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হবে। নতুন ও পুরোনো সব ধরনের ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হবে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চাহিদা।”
“ব্যাংকগুলো এটা জানুয়ারির পরিবর্তে ১ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন করতে চায়। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুই মাসের সময় নিয়ে এসেছিলাম। ব্যাংকগুলো তিন মাসের জন্য যেসব আমানত নিয়েছিল, এর মধ্যে তার মেয়াদ শেষ হবে। না হলে অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। এতে ব্যাংকগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে।”
এই সুদ হার বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো কোনো শর্ত দিয়েছে কি না-এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোনো শর্ত দেয়নি। আমরাই বলেছি, সরকারের যে কম সুদের তহবিল আছে, তার অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংক পাবে। সরকারি ব্যাংকগুলো অর্ধেক পাবে।”
মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো সাড়ে ৫ শতাংশ সুদে ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ সুদে সরকারি আমানত নেবে। ফলে প্রতিযোগিতা ভালো। পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে সরকারি আমানত বরাদ্দ পাবে।
১ এপ্রিল থেকে সুদ হার কার্যকরের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হবে ৯ এবং আমানতের ৬ শতাংশ। এর বেশি কেউ অফার করতে পারবে না। ব্যক্তি ও সরকারি তহবিল নিতে এর চেয়ে বেশি সুদ কেউ দিতে পারবে না। আর ৯ শতাংশ কার্যকর হলে সরল সুদ আর লাগবে না। সব সমান হয়ে যাবে।
বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “রোববার রাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গভর্নর, অর্থমন্ত্রী ও আমাকে ডেকেছিলেন। তিনি বলেছেন, শুধু উৎপাদন বা শিল্পকারখানা নয়, সব ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও এর নিচে হতে হবে। এ জন্য আমরা কয়েক দিন সময় পেয়েছি। দেশের জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে এপ্রিল থেকে আমানতে ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হবে।”
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের পক্ষ থেকে সুদ হার কমিয়ে এক অঙ্কে (১০ শতাংশের কম) আনার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক মালিকরাও দেড় বছর ধরে এমন ঘোষণা দিয়ে নানা সুবিধা নিয়ে আসছেন। তবে সুদ হার আর কমেনি।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এই সুদ হার হবে ৯ শতাংশ। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে উৎপাদন খাতে অর্থাৎ শিল্প খাতে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করার সিদ্ধান্ত হয় বোর্ড সভায়।
বর্তমানে ব্যাংক ভেদে উৎপাদন খাতে সুদ হার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ।