এম. জাফরান আদনান

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে লড়ার জন্য তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে ঢাকা দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে উত্তরে মেয়র পদে লড়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ।

শনিবার সন্ধায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির যেটা পার্লামেন্টারি বোর্ড আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সব কিছু বিবেচনা করে উত্তরে তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে।”

‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা একটি গণতান্ত্রিক দল, আমাদের পক্ষে নির্বাচনে থাকাটাই উপযোগী কাজ। তার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের আন্দোলনটা আরও বেগবান করতে সক্ষম হব, জনগণের কাছে যেতে সুযোগ সৃষ্টি হবে।

যদিও গত নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সেই সুযোগ আমাদের দেয়নি। এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এটা আমরা মনে করি না, তারপরেও আমরা এই নির্বাচনে যাচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে।”

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ছেলে। ২০১৫ সালে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরেক ব্যবসায়ী প্রয়াত আনিসুল হক।

আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ঢাকা উত্তরে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে মেয়র পদে আছেন আরেক ব্যবসায়ী মো. আতিকুল ইসলাম। এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তিনি। শনিবারই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।

অপরদিকে ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস। এবার সেখানে এলেন খোকাপুত্র ইশরাক। এই সিটিতে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি একাই ছিলেন।

পাঁচ বছর আগে মাঝপথে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানো তাবিথ এবার আর সে পথে হাঁটতে চান না।

শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি প্রকাশ্যে বলতে চাচ্ছি- নির্বাচন আমাদের, জনমত আমাদের। নির্বাচন থেকে আমরা সরবই না।
আমরা শেষ পর্যন্ত, শেষের পরের থেকেও লড়াই করে নির্বাচনের ফলাফলই ছিনিয়ে আনব না, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার পরেই আমরা মাঠ থেকে ফেরত যাব।”

তাবিথ আউয়াল বলেন, “আমরা দেশবাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, নগর উন্নয়নে তরুণ নতুন প্রজন্মকে এখন দরকার, মেধাবীদের দরকার। ঢাকা শহর বর্তমানে প্রত্যেকটা সূচকে নিম্ন স্তরে আছে। বাসস্থান বলেন, পানি বলেন, আবহাওয়া দূষণ বলেন-এসব থেকে আমরা চাচ্ছি ঢাকাবাসীকে মুক্ত করতে।”

‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের জন্য ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানান তিনি।

এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ী ইশরাক হোসেন।

শুক্রবার বিকালে তাবিথের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “গত ২৯ ও ৩০ তারিখ এই কমিশনের অধীনে কী নির্বাচন হয়েছে? আমি তাদের থেকে খু্ব বেশি আশা করতে পারছি না। তারপরেও যেহেতু আমরা একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রয়েছি, সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি।”

বাবার কাছ থেকে ঢাকাবাসীর প্রয়োজন সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন বলে জানান ইশরাক।

‘নগর সরকার’-এর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কারণ একটি সিটি করপোরেশনে যে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে তার পক্ষে ঢাকা শহরে যে নাগরিক সমস্যাগুলো রয়েছে এবং নাগরিকদের জীবনমানের যে প্রতিজ্ঞা তারা করছে, সেটা তাদের পক্ষে করা সম্ভব না। কারণ তাদের সেই ক্ষমতা অথবা আর্থিকভাবে সেই সক্ষমতা তাদের নাই।”
এবার শেষ দেখবেন এমনটি জানিয়েছেন তাবিদ

ঢাকা উত্তরে তাবিথের পাশাপাশি দলের বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনও মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা তিনজনই বিকাল ৪টায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সামনে উপস্থিত হন।

লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুই তরুণ মেয়র প্রার্থী ঢাকাবাসীর মনোযোগ আকর্ষণের পাশাপাশি বিএনপির রাজনৈতিক দাবি-দাওয়াও সামনে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

ইশরাক ও তাবিথকে মনোনয়ন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দক্ষিণে আমাদের প্রার্থী ছিলেন একজন, তিনি হচ্ছেন ইশরাক হোসেন, প্রকৌশলী। তার একটা ব্যক্তিগত পরিচয় আছে যে, আমাদের ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক খোকা সাহেবের বড় ছেলে। যদি সে একেবারে নতুন। তবে নতুনদের মাঝে তার একটা বড় আকর্ষণ থাকবে, প্রভাব থাকবে। বিশেষ করে সে উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার্স করেছেন। তার চিন্তাশক্তি, তার মেধা, তার বাচনভঙ্গি সব কিছুই মোটামুটিভাবে মনে হয় যে, মানুষকে আকৃষ্ট করবে এবং করেছেও বোধ হয়। সেজন্য আমরা মনে করেছি যে, ইশরাক হোসেন আমাদের একজন ভালো প্রার্থী। তাকে সেজন্য মনোনয়ন দিয়েছি।

“তাবিথ আউয়াল একেবারে তরুণ না হলেও তরুণ। বয়স ৪০। খুব বেশি বয়স না। আমরা দেখেছি যে  তাবিথ আউয়াল সাহেব গত নির্বাচন করেছেন। উনিও নতুন প্রজন্মের কাছে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নির্বাচন করবেন বলে উনি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর মুভমেন্ট করেছেন কয়েক মাস ধরে। ইতোমধ্যে ভোটারদের মাঝে তার প্রতিশ্রুতিটা জানিয়ে দিয়েছেন। তাবিথ উচ্চ শিক্ষিত। তার দৃষ্টিভঙ্গিগুলো অত্যন্ত আধুনিক। আমি মনে করি যে, অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচিত হতে পারলে একটা ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আমি মনে করি।”

একইসঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক এজেন্ডাকে সামনে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই তরুণ বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করছেন দলটির নেতারা।

কাউন্সিলর প্রার্থী ‘চূড়ান্ত হবে রোববার’

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কমিটি করেছে বিএনপি।

উত্তরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে বাছাই কমিটিতে রয়েছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এম এ কাইয়ুম, বজলুল বাসিত আনজু, আহসানউল্লাহ হাসান ও সুলতানা আহমেদ।

দক্ষিণে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের নেতৃত্বে বাছাই কমিটিতে রয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আফরোজা আব্বাস, কাজী আবুল বাশার ও নবী উল্লাহ নবী।

আর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বাছাই কমিটিতে রয়েছেন আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, জিবা খান, নিপুণ রায় চৌধুরী এবং মহিলা দলের উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি।

এই দুই কমিটি রোববার সকাল ৯টায় গুলশানের কার্যালয় এবং নয়া পল্টনে মহানগর কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

আগামী ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। দলীয় প্রতীকের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here