জাতীয় স্মৃতিসৌধে তরুণদের কণ্ঠে এগিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা, ছবি: শাকিল আহমেদ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সাভার থেকে: সকালের সূর্য পূব আকাশে উঁকি দেওয়ার আগেই শিশির জমেছে ঘাসে। সে শিশিরে আজ বিজয়ের ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণ মুগ্ধতা ছড়িয়ে বিশ্ব দরবারে উজ্বল করে তোলে গোটা বাংলাকে। মহান বিজয় দিবসে এই বাংলাকে বিশ্ব দরবারে আরও বেশি উন্নত জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার লক্ষ্য স্থির করার দৃঢ় প্রত্যয় দেশের তরুণদের কণ্ঠে।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের দিন সকালে জাতির বিজয় উদযাপন এবং মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই ভিড় জমে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানেই নিজেদের আরও সাবলীল করে গড়ে তোলা, দেশের জন্য নিজের সবটুকু দেওয়া, বিশ্বে নিজের দেশকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নেয় বিজয় দিবসের শিশিরে ভেজা তারুণ্য।

কথা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আশা বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যে বিজয় এসেছে, আমরা তরুণরা অবশ্যই চেষ্টা করব, সে বিজয়ের সঠিক ব্যবহার করতে। আমরা তরুণরা সবসময়ই দেশকে নিয়ে ভাবি। তবে মাঝে মাঝে তরুণ সমাজ যে বিপথে চলে যায়, তার বিরুদ্ধে আমাদের নিজেদেরই সোচ্চার হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের দেশকে তুলে ধরার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই। প্রতিটি দিনই একেকটি চ্যালেঞ্জ। প্রতিটা দিনেই আমরা সোচ্চার নিজেদের দেশকে তুলে ধরার জন্য। একইসঙ্গে আমরা শ্রদ্ধা জানাই আমারদের জাতি রাষ্ট্রের কারিগরদের।

এসময় তিনি নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে বলেন, আমাদের দেশের নারীরা এখনও সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ নন। তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে হয়রানির স্বীকার হন। তাই বিজয়ের এতগুলো বছর পার হওয়ার পরে হলেও আমাদের উচিত নারীদের বিষয়ে আরও সুন্দর করে ভাবা। তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া।

এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনিরা তৃপ্তি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সবসময় চাই আমাদের বাঙালি জাতি-রাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ একটি জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক। যে জাতি নয় মাসে স্বাধীনতা আনতে পারে, সে জাতি চাইলে যেকোনো অসাধ্যকেই সাধ্য করতে পারে। এ হিসেবে আমি আমার জায়গা থেকে যেমন নিজের সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি, তেমনি অন্যরা এগিয়ে এলে আমাদের অগ্রযাত্রা আরও বেশি অগ্রগামী হবে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বরে তারুণ্যের আরেক প্রতীক মানবকল্যাণ সমাজকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি সৌরভ দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমার মতে, বাঙালি যতটা না একটা জাতি বা রাষ্ট্র, তার থেকেও বেশি একটি পরিবার। এই পরিবারকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে তারুণের পদক্ষেপই সবচেয়ে বেশি জরুরি। মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর জাতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারি আমাদের দেশকে।

তরুণদের এ কথায় মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। বলেন, একদিকে যেমন আমাদের তরুণ সমাজকে মানবিকতা, মুক্তচিন্তা, অসাম্প্রদায়িকতাকে গ্রহণ করতে হবে, তেমনি বেরিয়ে আসতে হবে উগ্রবাদী ভাবধারা থেকেও। দেশের অগ্রযাত্রায় মানবিক এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। লক্ষ্য স্থির করে প্রযুক্তি এবং ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here