আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে এসেচ্ছে স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্র। বিমান, ট্রেন, সড়ক, নৌপথসহ নানা কৌশলে এসব স্বর্ণের চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেটও। এই সিন্ডিকেট বাংলাদেশ থেকে শুরু করে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে এই সক্রিয় আছে।
গত ২২ নভেম্বর শুক্রবার শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টয়লেটের ভিতর থেকেই পাওয়া ৮ কেজি ১৭০ গ্রাম ওজনের ৭০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছে। এসব স্বর্ণের দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। এ আগে মার্চ মাসেই সড়ক পথেই ধরা পড়ে প্রায় ৩১ কোটি টাকার স্বর্ণ।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার-ই-জামান বলেন, ২২ নভেম্বর দুপুরে মাসকাট থেকে সালাম এয়ারের যাত্রীরা নামার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা হয়। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের কর্মকর্তারা স্বর্ণের বারসহ পলিথিনটি টয়লেটে খুঁজে পান। এর আগে গোপন সংবাদ থাকায় ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের ওপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে কাস্টম আইন অনুযায়ী জব্দসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চোরাচালান সিন্ডিকেটে চট্টগ্রামের আলোচিত ফটিকছড়ির আবু, রাউজানের হারুন, সাতকানিয়ার টিপু, জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রামের রণি, ভুট্টুসহ অনেকেই দেশ-বিদেশে থাকলেও তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন প্রশাসন। তবে এসবের নেপথ্যে জড়িত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের নামও থাকতে পারে বলে সূত্রে নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে এর আগে মার্চ মাসে (৩ মার্চ) একঘণ্টার ব্যবধানে চট্টগ্রাম মহানগর ও মিরসরাইয়ে ধরা পড়ে প্রায় ৩১ কোটি টাকার ৭০০ পিস স্বর্ণের বার। যা নিয়ে সরগরম চট্টগ্রাম। বিদেশ থেকে বিমানযোগে আসা স্বর্ণের বারগুলো শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গলে বের হলো কিভাবে? দু’টি চালানে চারজন ধরা পড়লেও মূল হোতা কারা? সেই অনুসন্ধানে রয়েছে প্রশাসন। তবে এ চক্রের পেছনে জড়িত কয়েকজনের নাম জানা গেলেও গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছেন পুলিশ-র্যাব সদস্যরা।
প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ গোপন সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর সিআরবি এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নিতাইগঞ্জ এলাকার পরেশ চন্দ্র সাহার পুত্র প্রলয় সাহা (৫৯) ও প্রাইভেটকার চালক শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার শিদলপুরা এলাকার হাশেম সওদাগরের পুত্র বিলাল হোসেন কাদেরকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। এর এক ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকায় আরেকটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৬০০ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করে। এ সময় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার আজমপুর গ্রামের শহীদুল ইসলামের পুত্র রাকিব হোসেন (৩৪) ও মোবারক পাড়া গ্রামের আলী হোসেন পুত্র করিম খানকে (৩৪) গ্রেফতার করে পুলিশ।
জব্দ স্বর্ণবারগুলোর প্রতিটি ২২ ক্যারেটের। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম খোদাই করা আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরব আমিরাত থেকে এদিন স্বর্ণের একটি বড় চালান আসে। এর মধ্যে ভাগ করে পাচার করতে গিয়ে দু’টি প্রাইভেটকারের চালান ধরা পড়ে। এর আগে হয়তো আরো চালান যেতে পারে। চট্টগ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা বিদেশে বসা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে দেশে স্বর্ণপাচার কাজে জড়িত। তাছাড়া সিভিল এভিয়েশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য চক্রটির সঙ্গে জড়িত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here