এবার সংসদীয় কমিটির একটি সভায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক বা চালক-হেলপারদের নিয়োগপত্র দিতে সম্মত হয়েছে মালিকপক্ষ। পাশাপাশি শ্রমিকপক্ষও সম্মত হয়েছে নিয়োগপত্র গ্রহণে। সড়ক পরিবহন আইনে এই নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও এতদিন মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষের অনীহার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন থেকে মালিকপক্ষ পরিবহনের রুট পারমিটের জন্য আবেদনের সঙ্গে চালকের নিয়োগপত্র যুক্ত করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া ২০০৫ সালের আইনে সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠিত হলেও সড়ক পরিবহন আর শ্রম মন্ত্রণালয়ের টানাটানির কারণে এই বোর্ড শ্রমিকদের কোনো কাজে আসেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি।
এসময় বৈঠকে জানানো হয়, শ্রমিক কল্যাণে এই বোর্ডকে দেওয়া এক কোটি টাকা ‘সিড মানি’ এখন এক কোটি ৭০ লাখ টাকা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা পরিবহন শ্রমিকদের কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কমিটি বোর্ডকে কার্যকর করতে উভয় মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করে।
আজ সংসদ ভবনে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, কমিটির সদস্য ও শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, মো. ইসরাফিল আলম এবং শামসুন নাহার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীসহ মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে উপস্থিতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৈঠকে নিয়োগপত্র দেওয়া-নেওয়া নিয়ে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষই একে অন্যকে দোষারোপ করেন।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আইনেই নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা রয়েছে। পরিবহনের রুট পারমিটের জন্য আবেদনের সঙ্গে চালকের নিয়োগপত্র যুক্ত করতে হয়। কিন্তু মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষের অনীহার কারণে আইন বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। আজ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দুইপক্ষই একমত হয়েছেন। এখন থেকে মালিকরা নিয়োগপত্র দেবেন এবং শ্রমিকরা নেবেন। এ বিষয়ে শ্রম বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দুই পক্ষকে আনুষ্ঠাকিভাবে চিঠি দেবে। বিষয়টি বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিবিড়ভাবে তদারকি করতে সুপারিশ করেছে কমিটি।
সংসদের গণসংযোগ বিভাগ জানায়, বৈঠকে ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বোর্ডকে আরো যুগোপযুগি ও বাস্তবসম্মত করার লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ-এর উপযুক্ত প্রতিনিধির সমন্বয় একটি সাব কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কমিটির পরবর্তীতে বৈঠকে সাব কমিটির সুপারিশ উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি ২৭টি পাটকলের মধ্যে ৬টি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাকি ২১টি কারখানার কোনোটিতেই মজুরি স্কেল বাস্তবায়িত হয়নি। বেসরকারি ১৭১টি পাটকলের মধ্যে বন্ধ আছে ৩৫টি। চালু থাকা ১৩৬টি পাটকলের মধ্যে ৮৮টিতে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের মিলগুলোর উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রি করে যে অর্থ আসে, তা দিয়ে জাতীয় মজুরি স্কেল ২০১৫ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় হতে এ বাবদ চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পাওয়া গেলে মজুরি স্কেল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here