জুয়াসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ভাবমূর্তি সংকটে পড়া যুবলীগকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারায় আনতে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে সংগঠনের নতুন চেয়ারম‌্যান হিসেবে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

যুবলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মাইনুল হো‌সেন নি‌খিল। তিনি ঢাক‌া মহানগর যুবলী‌গের (উত্তর) বর্তমান ক‌মি‌টির সভাপ‌তি।

যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের দ্বিতীয় পর্বে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুবলীগের নতুন এই চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় নিখিলকে মহানগর যুবলীগ থে‌কে পদত্যাগ কর‌তে হবে। তার স্থানে ভারপ্রাপ্ত হি‌সে‌বে দা‌য়িত্ব পালন কর‌বেন জা‌কির হো‌সেন বাবুল।

শেখ ফজলে শামস পরশ এমন এক সময়ে যুবলীগের নেতৃত্বে এলেন যখন গত ৪৩ বছরে যুবলীগ বর্তমানে সবচেয়ে সংকটকালীন সময় পার করছে। দুর্নীতি অনিয়ম আর ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে সংগঠনটির ওপর দিয়ে বড় ধরনের ঝড় বয়ে যাওয়ার পর এখন সংগঠনটিকে ঢেলে সাজানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ।

যুবলী‌গের চেয়ারম্যান প‌দে পর‌শের নাম প্রস্তাব করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম। চেয়ারম্যান প‌দে আর কো‌নো নাম না আসায় বিনা প্র‌তিদ্ব‌ন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বা‌চিত হন তিনি।

দা‌য়িত্ব পে‌য়ে তাৎক্ষ‌ণিক প্র‌তি‌ক্রিয়ায় পরশ বলেন, ‘যুবলীগের নেতা হিসেবে নয়, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে অ‌র্পিত দা‌য়িত্ব পালন করতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সততার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করব।’

এ সময় যুবলীগের সকল পর্যায়ের নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

পরশ সরাসরি রাজনীতিতে না জড়ালেও সংগঠনের দুঃসময়ে বাবা শেখ ফজলুল হক মনির হাতে গড়া সংগঠনের দায়িত্ব পেলেন তিনি। এর আগে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত না হলেও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেশ আস্থাভাজন ছিলেন পরশ। সপ্তম কংগ্রেসে সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর তার নেতৃত্বে যুবলীগ হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে কি না সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।

শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কালো রাতে শেখ ফজলে শামস পরশের বাবা-মা শহীদ হয়েছিলেন। তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসনের এমপি।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ছাড়াও ঘাতকরা আক্রমণ করে আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ধানমন্ডির বাড়িতে। ঘাতকের বুলেটে মণি এবং তার স্ত্রী শেখ আরজু মনি নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান দুই শিশুপুত্র পরশ ও তাপস।

১৯৭৫ এ শেখ ফজলে শামস পরশের বয়স ছিল ৫, আর শেখ ফজলে নূর তাপসের ৩ বছর। পরিণত বয়সে তাপস রাজনীতিতে পাকাপোক্ত অবস্থান করে নিলেও দূরে ছিলেন পরশ। শেখ ফজলে শামস পরশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ফের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। গেল ১০ বছর ধরে তিনি রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

এর আগে শনিবার বেলা ১১টা ৮মিনিটে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কংগ্রেস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।

স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুবলীগ গঠন করেন তার ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি। ১৯৭৪ সালে যুবলীগের প্রথম কংগ্রেসে তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১২ সালে ষষ্ঠ কংগ্রেসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান শেখ মনি ও শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি ওমর ফারুক। ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে তাকে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে সম্মেলনের সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।

১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ১৯৯৩ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here